মানুষের জীবন নিয়ে অতিরিক্ত কৌতূহল সরাতে চাইলে:- এই বিষয়ে ইসলাম কী শিক্ষা দেয় তা নিয়ে পড়ালেখা করতে হবে।
- নিজের মাঝে এই খারাপ স্বভাব আছে কিনা ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে সেটা সরানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে।
- মানুষের সাথে অযথা মেলামেশা, ফোনে কথা, আড্ডা কমাতে হবে।
- কিছু মানুষ আছে যারা কথা চালাচালি করে। এদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
- আমরা চাই না কেউ আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করুক। অন্যের জীবন নিয়ে তাহলে আমরা সেই একই কাজ কেন করবো?
- এমন ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে হবে যেন অন্যরা এসে কথা কানে ঢালতে না পারে।
- যা কিছু কথা হেঁটে বেড়ায়, সবকিছু শোনামাত্র বিশ্বাস না করা এবং নিজে সেসব প্রচারে অংশ না নেয়া।
- একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্মান, সম্পদ এবং জীবন
হারাম। একথা স্মরণ রাখা।
- সব অযথা আচরণের হিসাব দিতে হবে। তাই এসব থেকে বিরত থাকার আড়ালে নিজেরই যে লাভ, সেটা অনুধাবন করা।
▫️▫️▫️▫️▫️▫️▫️
এই প্রসঙ্গে দুইটা হাদীস সাহায্য করতে পারে। ▫️আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কোনো ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্যের অংশ হলো, সে এমন বিষয় এড়িয়ে চলে যা তার জন্য প্রয়োজনীয় নয়।~সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯৭৬)
ব্যাখ্যা:
রাসূল ﷺ উত্তম চরিত্রের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি খারাপ আচরণ থেকে সতর্ক করতেন এবং সেগুলোর নিন্দা করতেন। এই হাদিসে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:
“কোনো ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্যের অংশ হলো, সে এমন বিষয় এড়িয়ে চলে যা তার জন্য প্রয়োজনীয় নয়।”এর অর্থ হলো, একজন মুসলিমের ইসলামের সৌন্দর্য ও ঈমানের পরিপূর্ণতার মধ্যে অন্যতম লক্ষণ হলো, এমন কথা বা কাজ থেকে দূরে থাকা যা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, উপকারী নয় বা তার কোনো উপকারে আসবে না।
এটি অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে অযথা হস্তক্ষেপ না করার এবং তুচ্ছ বিষয় নিয়ে না মাথা ঘামানোর নির্দেশ দেয়।এখানে এমন বিষয় থেকেও দূরে থাকার ইঙ্গিত রয়েছে, যা আল্লাহ হারাম করেছেন বা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অপছন্দ করেছেন। একইভাবে,
এমন কোনো অতিরিক্ত কথা, কাজ বা আচরণ এড়িয়ে চলাও অন্তর্ভুক্ত, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয়।এমন বিষয় শুধুমাত্র দুনিয়াবি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এতে এমন আখিরাত সংশ্লিষ্ট বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত, যেমন গায়েব বা অদৃশ্য জগতের বাস্তবতা নিয়ে অযথা খোঁজাখুঁজি করা বা সৃষ্টির গোপন রহস্য সম্পর্কে এমন প্রশ্ন করা, যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে।
এই হাদিস থেকে শিক্ষা নেয়া যায় যে,
একজন মুসলিমের উচিত এমন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, যা তার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর ও উপকারী।
▫️অন্য হাদীসটি হলো:
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেনঃ
"
তোমাদের কেউ প্রকৃত মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে।"
(সহীহ আল বুখারী: ১৩)
ব্যাখ্যা:
রাসূল ﷺ এর এই হাদিস-
ইসলামের চতুর্থাংশ এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো থেকে সকল উত্তম আদবের মূলনীতি উদ্ভূত হয়েছে। এখানে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন যে, একজন মুসলিমের পূর্ণাঙ্গ ঈমান তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তা তার মুসলিম ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করে। এখানে ঈমানের অভাব বলতে মূল ঈমানের অভাব বোঝানো হয়নি; বরং পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অভাব বোঝানো হয়েছে।
তাই, একজন মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলো কামনা করবে, তা দ্বীন-দুনিয়ার যেকোনো ভালো কাজ হোক। একইভাবে, যা তার নিজের জন্য অপছন্দনীয়, তা তার ভাইয়ের জন্যও অপছন্দ করবে। যদি সে তার মুসলিম ভাইয়ের মধ্যে দ্বীনের কোনো ঘাটতি দেখে, তবে তা সংশোধনের চেষ্টা করবে। আর যদি সে তার ভাইয়ের মধ্যে কোনো ভালো দিক দেখতে পায়, তবে তাকে সঠিক পথে স্থির থাকতে এবং সেই ভালো কাজ বাড়াতে সাহায্য করবে।
সত্যিকারের মুমিন তখনই হওয়া সম্ভব, যখন একজন মুমিন নিজের জন্য যা কামনা করে, তা অন্যদের জন্যও কামনা করে।
এটি তখনই সম্ভব হয়, যখন কারো অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ, ধোঁকাবাজি এবং ঈর্ষা থেকে মুক্ত থাকে। কারণ, ঈর্ষা একজন মানুষকে এই অনুভূতিতে পেয়ে বসে যে, অন্য কেউ তার থেকে ভালো অবস্থানে থাকবে বা সমান হবে, তা সে সহ্য করতে পারে না। সে চায়, ভালো দিকগুলোতে সে অন্য সবার চেয়ে আলাদা ও বিশেষ হয়ে থাকুক। অথচ ঈমান এর বিপরীত শিক্ষা দেয়; ঈমান বলে, একজন মুমিন তার ভাইদের সঙ্গে আল্লাহর দেওয়া কল্যাণে অংশীদার হতে চায়।
———
ব্যাখ্যার উৎস:
https://dorar.net/hadith/sharh/147242
https://dorar.net/hadith/sharh/7324