কলমে ললিতা


Channel's geo and language: India, Bengali
Category: Religion


ঁ হে ঠাকুর, তোমার শ্রীচরণে নিবেদন করি আমৃত্যু তোমাতে, আর তোমায় নিয়ে থাকতে পারি সেটুকু কৃপা করে দেখো।

Related channels

Channel's geo and language
India, Bengali
Category
Religion
Statistics
Posts filter






আমিও চলে যাবো একদিন
অন্ধকারে, দূর দিগন্তের রেখা ধরে।
রবে সব পৃথিবীর ই বুকে।
আমি নেই শুধু আমারই কাছে।


পূজ্যপাদ মহারাজের এই বক্তব্যটি শুনলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনবেন। 🙏






*এক প্রতাপশালী রাজা অন্যের মৃত্যু দেখে বড় কাতর হয়ে পড়েছিলেন। জীবন আর তাঁর কাছে অর্থময় মনে হত না। একদিন তিনি রাজ্যের সমস্ত জ্ঞানী গুণীদের ডাকলেন, তাঁর সমস্যার কথা বললেন। রাজা বললেন আপনারা আমায় এমন কিছু কথা লিখে দিন যা পড়ে আমি আবার নতুন উৎসাহে জীবনে চলতে পারি। জ্ঞানীরা অনেক বিচার রাজাকে একটা হীরের আংটিতে কিছু লিখে আংটিটি একটা ঢাকনার মধ্যে পুরে রাজার কবজিতে বেঁধে দিলেন। তাঁরা বললেন, "জীবনে যখন বিপদে পড়বে কবজিতে বাঁধা বাক্সটির মধ্যের হীরের ওপর লেখা কথাগুলো পড়বেন, তাহলেই হবে"।

রাজা বেশ আছেন। হঠাতই পাশের রাজ্যের রাজা আক্রমণ করলেন। আক্রমণ এত আকস্মিক ছিল যে সেনা ক্ষয় হল প্রচুর কিন্তু রাজা পরাভূত হলেন। তিনি রাজ্য ছেড়ে জঙ্গলে চলে গেলেন আত্মহননের উদ্দেশ্যে। হঠাতই তাঁর হাতের তাবিজটার কথা মনে পড়ল। তার ঢাকনা খুলে দেখলেন, হীরের ওপর লেখা আছে, "চিন্তা কর না, এই অবস্থাও বদলে যাবে"। রাজার মনে হল তাহলে তিনি চেষ্টা করলে তাঁর হৃত সাম্রাজ্য ফেরত পাবে। এক বছর ধরে জঙ্গলে লুকিয়ে সে তাঁর পরাভূত বাহিনীকে একত্রিত করে আচমকাই যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। সেই পূর্বের রাজা এবারে পরাভূত ও মারা গেলেন।

জঙ্গলের রাজা প্রবল বিক্রমে রাজ্যে যখন প্রবেশ করছেন এমন সময় তাঁর তাবিজের কথা মনে পড়ল। রাজা আবার সেই তাবিজের মধ্যে হীরকে ক্ষচিত কথাটি পড়লেন, তাতে লেখা রয়েছে, "চিন্তা কর না, এই অবস্থাও বদলে যাবে।"

কথাগুলো পড়া মাত্র তাঁর মনে হল তাহলে আমি এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছি কেন? তার থেকে বরং আমার সেবা, ভালবাসা, শুভ কর্ম দিয়ে প্রজা কল্যাণে মগ্ন হই।

মূল গল্পের ভাষা ইংরাজী
সংগ্রহ শ্রী সুভাষ পাল
ভাবানুবাদ স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দ।


৬ষ্ঠ পর্ব


নিবেদিতা সম্বন্ধে ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর কোন পত্র বা পত্রিকায় বিশেষ লিখিত
বিবরণ পাওয়া যায় না। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: “তাঁহার বিষয়ে আচার্য
বসু মহাশয়ের নিকট অনেক কথা শুনিয়াছি, তাহা অধিকতর শিক্ষাপ্রদ ও মনোহর।
নিবেদিতার প্রতি তাঁহার অন্তরের শ্রদ্ধা ঐ সকল প্রসঙ্গকালেই ব্যক্ত হইত।” ঐরূপ
এক কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “নিবেদিতার মহাপ্রাণতা ও ত্যাগের কথা
আমরা ধারণা করতে পারব না। দেশ উপযুক্ত হলে তাঁর কদর বুঝবে।”
নিবেদিতার অন্তরের একান্ত আকঙ্ক্ষা ছিল ভারতের অর্থে ভারতীয়দের
দ্বারা একটি বিজ্ঞান-মন্দির
বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান-মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে
প্রতিষ্ঠিত হবে,
যেখানে ভারতীয় ছাত্ররা বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান - মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ডঃ বসুর সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনার অন্ত ছিল না। পরবর্তিকালে জগদীশচন্দ্র বসু
কর্তৃক যে বিজ্ঞান-মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার দ্বারদেশে দেওয়ালের গায়ে
খোদিত দীপহস্তে নারীমূর্তিটি নিবেদিতার পুণ্যস্মৃতির নিদর্শন। অধ্যাপক গেডিজ
লিখেছেন: “বিজ্ঞান ও ভারতের অগ্রগতির বিপুল সম্ভাবনায় পূর্ণ, বহু-আকাঙ্ক্ষিত
এই গবেষণাগারের বাস্তবরূপ গ্রহণে নিবেদিতার জ্বলন্ত বিশ্বাস কম প্রেরণা ও
উৎসাহ দেয় নাই। তাঁহার [বসুর] গবেষণাগারের প্রবেশপথে স্মৃতি উৎসের
সম্মুখস্থিত মন্দিরাভিমুখে দীপহস্তে নারীমূর্তিটির এইভাবে ব্যাখ্যা করা যাইতে
পারে।”
নিবেদিতার প্রতিভা ছিল সর্বতোমুখী। তাই বৈজ্ঞানিক, স্বদেশসেবক,
সাহিত্যিক, সাংবাদিক—প্রত্যেকে তাঁর মধ্যে নিজের জীবনের আদর্শের পূর্ণ
অভিব্যক্তি দেখে মুগ্ধ হতেন এবং সর্বদা তাঁর নিকট নিজ জীবনের উদ্দেশ্যসাধনে
সাহায্য, উৎসাহ ও প্রেরণা লাভ করে কৃতজ্ঞ বোধ করতেন। ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামে, সভ্যতা ও সংস্কৃতি গঠনের মূলে সমাজের উচ্চস্তরে যে-সকল শিক্ষিত
এবং প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের ওপর নিবেদিতার প্রভাব ছিল সুগভীর।
যে তাঁর সান্নিধ্যে এসেছে সে-ই ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর অকপট শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ না হয়ে পারেনি। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে
মেলামেশা ও আদান-প্রদান যেমন তাঁর চরিত্রের ও কর্মজীবনের বহু দিক
উন্মোচিত করেছে, তেমনি এরূপে নানাভাবে ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর আন্তরিক
অনুরাগ ও সুগভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ নিবেদিতাকে আশীর্বাদ
করে বলেছিলেন: “ভবিষ্যৎ ভারতের সন্তানের তরে/ সেবিকা, বান্ধবী, মাতা,
তুমি একাধারে।” গুরুর এই বাক্য নিবেদিতা তাঁর জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে
বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন। বর্তমান ভারতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনে তাঁর যে সুমহান অবদান, তা তাঁর এরূপ আদর্শ জীবনেরই একটি অন্যতম অভিব্যক্তি।

(সমাপ্ত)


বেদনার বৃষ্টিতে ভিজে গেছে পথ ঘাট
হয়তো কোনও সমব্যথীর কপাল ছুঁয়ে
অবহেলা গুলো.....
স্থান থেকে স্থানান্তরে যায় ।
তারপর মিশে যায় জীবনের উত্তাল সমুদ্রে।


এঁরা কোন্ দেশের,, সমাজের,, পরিবারের!!??
বিশ্বময় তবুও চলে কতো কর্মযজ্ঞ,, কতো আয়োজন,, কতো কিছুর আহ্বান!!!!!


(৫ম পর্ব)

ডঃ বসু নিবেদিতার থেকে বয়সে বড় ছিলেন; এর জন্য নিবেদিতাও তাঁকে
খুব শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতেন। তিনি ডঃ বসুকে সাধারণত ‘ম্যান অব
সায়েন্স' বলে অভিহিত করতেন, তবে তাঁর ডায়েরী এবং চিঠিপত্রে অনেকবার
তাঁর উদ্দেশে তিনি 'Bairn' শব্দ ব্যবহার করেছেন। স্কটিশ 'Bairn' শব্দের অর্থ—
খোকা। এর কারণ ছিল—সামান্য বাধা বা কোন বিপদের সম্মুখীন হলে তিনি
হতাশ ও অবসন্ন বোধ করতেন। তখন নিবেদিতা মায়ের মতো স্নেহ, উৎসাহ ও
প্রেরণা দিয়ে তাঁকে উদ্যমশীল করে তুলতেন। এ-বিষয়ে ডঃ বসুও বলেছেন:
“হতাশ ও অবসন্ন বোধ করিলে আমি নিবেদিতার নিকট আশ্রয় লইতাম।” তাঁর
এই শিশুসুলভ স্বভাবের জন্য নিবেদিতা তাঁকে মাতৃস্নেহ দিয়ে রক্ষা করেছিলেন।
বলতে গেলে নিবেদিতা এবং ডঃ বসুর পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় (১৮৯৯-
১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) মাত্র বারো বছর। কিন্তু সময়ের পরিধির ব্যাপ্তি স্বল্পকাল
হলেও ডঃ বসুর দীর্ঘকালের বিজ্ঞানসাধনার জীবনে এর প্রভাব ছিল সুগভীর
এবং অপরিসীম। অধ্যাপক গেডিজ ডঃ বসুর জীবনীতে লিখেছেন: “ডক্টর বসুর
নূতন আবিষ্কারগুলি সম্বন্ধে অপরের প্রত্যয় জন্মাইবার পক্ষে বহু বাধা ছিল;
ঐ সকল বাধা দূর করিবার জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিবেদিতা সর্বপ্রকার সাহায্য
করিয়াছিলেন।” তাঁর সর্বাপেক্ষা কঠিন সংগ্রামের সময় নিবেদিতা তাঁকে কিভাবে
অযাচিত ও অনলসভাবে সাহায্য করেছিলেন সে-কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে
লেখা ডঃ বসুর পত্রগুলি প্রমাণ করে। এই সকল কথা স্মরণ করে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ১৯৩৭-এ ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর কথাপ্রসঙ্গে
বলেছিলেন : “এই সময়ে তাঁর কাজে ও রচনায় উৎসাহদাত্রীরূপে মূল্যবান সহায়
তিনি পেয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতাকে। জগদীশচন্দ্রের জীবনের ইতিহাসে এই
মহনীয়া নারীর নাম সম্মানের সঙ্গে রক্ষার যোগ্য।”
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস প্রদর্শনী এবং একটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস
অব ফিজিক্স' আয়োজিত হয়েছিল, যেখানে ডঃ বসু তাঁর নতুন আবিষ্কার
‘রেসপন্স অব ইনঅরগ্যানিক অ্যান্ড লিভিং ম্যাটার' বিষয়ে আলোচনা
করেছিলেন। সেই সময় স্বামীজী এবং নিবেদিতা উভয়েই উপস্থিত ছিলেন।
ডঃ বসুর কৃতিত্বে তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্ববোধ করেন। এরপরেই ডঃ
বসু ইংল্যান্ডে চলে যান। কিছুদিন পরে ভগিনী নিবেদিতাও ইংল্যান্ডে ফিরে
গিয়েছিলেন। সেই সময় ডঃ বসু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং
তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। তারপর নিবেদিতা তাঁকে উইম্বলডনে তাঁর
মায়ের কাছে রেখে সুস্থ করে তোলেন।




(৪র্থ পর্ব)

ব্রিটিশ সরকার কখনই তাঁর কাজে কোন উৎসাহ দেয়নি, পরিবর্তে দেখিয়েছে
চরম উদাসীনতা। গবেষণার প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য তিনি পাননি। ‘রয়্যাল
সোসাইটি'তে তাঁর বক্তব্য বিষয় পেশ করার অনুমোদন সহজে পাওয়া যায়নি।
এমনকি তাঁর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পর্যন্ত বিলুপ্তিসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে।

ক্রমান্বয়ে এই সকল বাধার সম্মুখীন হতে হতে অনেক সময় তিনি হতাশ ও অবসন্ন
বোধ করতেন। নিবেদিতা তাঁর এই সকল বিষয় ও অসুবিধা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন।
তিনি জানতেন যে, স্বাধীন দেশের একজন সাধারণ বৈজ্ঞানিকও কত সুযোগ-সুবিধা
পান। তাই এমন বিরল প্রতিভার এহেন দুর্দশা দেখে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তাঁর মন
আক্রোশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তিনি মনে করতেন, ডঃ বসু জাতীয় সম্পদ। তাই শুধু
সাহায্য নয়, সর্বতোভাবে তাঁকে রক্ষা করা তাঁর নিজের দায়িত্ব। স্বামীজী চেয়েছিলেন,
ভারতবাসী পাশ্চাত্য দেশবাসীকে তাঁর অধ্যাত্মজ্ঞানভাণ্ডার থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান
দান করবে এবং তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান তথা অপরাবিদ্যার জ্ঞান লাভ করে
স্বদেশের ঐহিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। নিবেদিতাও বুঝেছিলেন, বিজ্ঞানচর্চা
ছাড়া বর্তমান ভারতের জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।
ডঃ বসু তাঁর বিজ্ঞানসাধনায় জয়লাভ করলে বিজ্ঞানজগতে এক বিরাট পরিবর্তন
আসবে, তার ফলে ভারতবর্ষ বিশ্বের দরবারে গভীর মর্যাদা লাভ করবে। “ভারতের
অদ্বৈত-তত্ত্ব বিজ্ঞানের মধ্য দিয়া পুনরায় প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হইবে।” —এই ছিল
নিবেদিতার স্বপ্ন। এই কারণে তিনি জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান-গবেষণায় সর্বান্তঃকরণে
ও সর্বতোভাবে সাহায্যদান করতে সদা সাগ্রহে সচেষ্ট থাকতেন।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে থাকার সময় থেকে নিবেদিতা জগদীশচন্দ্র
বসুর গবেষণার কাজে সাহায্য করতে আরম্ভ করেন। ১৯০২ থেকে ১৯০৭-এর
মধ্যে ডঃ বসুর তিনটি বিখ্যাত বই প্রকাশিত হয়—Response in the Living and
Non-Living, Plant Response Comparative Electro-Physiology |
তিনি রচনা করেন 'Irritability of Plants' এবং অন্যান্য আরও প্রবন্ধ, যা পরে
ধারাবাহিকভাবে রয়্যাল সোসাইটি-পরিচালিত 'Philosophical Transactions'
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই সবকিছুই নিবেদিতা কর্তৃক সম্পাদিত বললে যথার্থ হয়
না। নিবেদিতার অসাধারণ ভাষানৈপুণ্য ঐ সকল বই প্রকাশ করতে যথেষ্ট সাহায্য
করেছিল। এই কয়েক বছর নিবেদিতা নিজেও কয়েকটি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ
রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। এই সময় ডঃ বসু প্রায় প্রতিদিন
বোসপাড়া লেনে আসতেন এবং বহুক্ষণ ধরে লেখালেখি চলত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
দেবমাতা (মিস লরা গ্লেন) কিছুদিন নিবেদিতার বাড়িতে ছিলেন। নিবেদিতার
বিদ্যালয় সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, ভগিনী নিবেদিতা লেখার কাজে সম্পূর্ণ মগ্ন
থাকতেন। ডঃ বসুর উদ্ভিজ্জীবন সম্বন্ধে নতুন পুস্তক রচনার কাজে তিনি সাহায্য
করতেন এবং তাতেও বহু সময় যেত। ডঃ বসু প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যালয়ে
অতিবাহিত করতেন এবং কখন কখন সেখানে আহারাদি সম্পন্ন করতেন।


৩য় পর্ব

এইরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতার
পরিচয় ঘটে। পরবর্তিকালে নিবেদিতা ডঃ বসুর এই সংগ্রামের নাম দিয়েছিলেন—
“বোস ওয়ার'। এমন একজন বিখ্যাত প্রতিভাবান ব্যক্তিকে এত শোচনীয় অবস্থার
মধ্যে কাজ করতে দেখে ভগিনী রাগে, ক্ষোভে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন। শুধুমাত্র
ভারতীয় বলেই এমন একটি বিরল প্রতিভাকে এরূপ দুর্দশার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে
তিনি চুপ করে থাকতে পারেননি। কাউন্সিল সদস্য গোখলেকে লেখা নিবেদিতার
অনেকগুলি পত্র পাওয়া গিয়েছে, যাতে দেখা যায় কিভাবে নিবেদিতা সরকারি মহলে
ডঃ বসুর বিরুদ্ধে অবিচারের প্রতিবিধান চাইছেন।
ইতোমধ্যে নিবেদিতা বাগবাজারে তার বিদ্যালয় আরম্ভ করেছেন ১৮৯৮-এর ১৩
নভেম্বর। স্বয়ং শ্রীমা সারদাদেবী তার উদ্বোধন করেছিলেন। সেই বিদ্যালয় এখন এমন
সুন্দরভাবে চলছে দেখে ডঃ বসুর স্ত্রী অবলা বসু প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি।
কারণ, কয়েক মাস আগে যখন ভগিনী প্রথম তাঁর বিদ্যালয়ের কথা বলেছিলেন,
তখন বাগবাজারের মতো রক্ষণশীল হিন্দুদের সমাজে তা আদৌ সম্ভব হবে
কিনা—এ-বিষয়ে তিনি খুবই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বোসপাড়া লেনে
গিয়ে স্বচক্ষে নিবেদিতার বিদ্যালয় দেখার পর শ্রীমতী বসু মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর
বিশ্বাস হয়েছিল যে, সত্যই নিবেদিতা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। বিশেষ করে
প্লেগের সময় তিনি এমনভাবে সেবাকার্য পরিচালনা করেছিলেন তা দেখে তিনি
স্তম্ভিত হয়েছিলেন। তাঁদের এই পরিচয় পরে শ্রদ্ধা-ভালবাসাপূর্ণ ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে
পরিণত হয়।
প্রতিবছর পূজার ছুটিতে এবং শীতের সময় নিবেদিতা ও ক্রিস্টিন বিভিন্ন
পাহাড়ী অঞ্চল—যেমন মায়াবতী, মুসৌরী ইত্যাদি স্থানে বেড়াতে যেতেন। শ্রীমতী
বসুকে নিবেদিতা ‘Bo' অর্থাৎ বউ বলে সম্বোধন করতেন। তাঁর সঙ্গে ক্রিস্টিন ও
নিবেদিতার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। সমগ্র বসু পরিবারের সঙ্গেই তাঁরা যেন সুগভীর
আত্মীয়তার সূত্রে এক হয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষত নিবেদিতা পরমাত্মীয়ের মতো
তাঁদের সুখ-দুঃখেরও ভাগী ছিলেন। কতদিন বসুদের বাড়িতে তাঁদের আমন্ত্রণে
তিনি ছোটখাট ঘরোয়া সভায় বুদ্ধগয়া, চিতোর, কাঞ্চী প্রভৃতি বিষয়ে বক্তৃতা
দিয়েছেন। রাত্রে ঘরোয়া আসরে তাঁর প্রিয় ইংরেজী কবিতাগুলি আবৃত্তি করতেন।
নিবেদিতার কাজেও অবলা বসু ও ডঃ বসুর ভগিনী লাবণ্যপ্রভা নানাভাবে সাহায্য
করতেন। ডঃ বসুর অসাধারণ বৈজ্ঞানিক প্রতিভার পরিচয় পেয়ে নিবেদিতা
মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল যে, পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকগণ যে জড়প্রকৃতির
গবেষণা করতে করতে বিভিন্ন তত্ত্বের উদ্ঘাটন করে থাকেন, তাঁর গবেষণা কিন্তু
এই ধরনের নয়। তাঁর গবেষণার প্রধান উৎস ছিল ভারতীয় আধ্যাত্মিক তত্ত্বের
ভিত্তি, যা প্রত্যক্ষ অনুভূতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই তত্ত্ব-সমুদয় ভারতীয় শাস্ত্রেরই
ভিত্তিস্বরূপ, যা ঘোষণা করে থাকে—এই চরাচর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কেবল জড়বস্তুর দ্বারা
নয়, সমস্তই এক চৈতন্যময় সত্তার দ্বারা পরিব্যাপ্ত। এই প্রসঙ্গে প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা
তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি ‘ভগিনী নিবেদিতা' গ্রন্থে লিখেছেন : “এই চরাচর বিশ্ব চৈতন্যময়,
সর্বভূতে সেই অদ্বিতীয় চৈতন্যেরই সত্তা, ‘যদিদং কিঞ্চ জগৎ সর্বং প্রাণ এজতি
নিঃসৃতম্’—এই যাহা কিছু চরাচর বস্তু দৃষ্ট হয়, সমস্তই প্রাণ (ব্রহ্ম) হইতে নিঃসৃত
এবং প্রাণসত্তায় স্পন্দিত হইতেছে—এই তত্ত্বের উপর শ্রীযুক্ত বসুর বিজ্ঞানবাদ
প্রতিষ্ঠিত। লতাগুল্মের মধ্যে তিনি যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করিয়াছেন, তাহার
উৎপত্তি একটি সুস্পষ্ট বোধ বা বিশ্বাস হইতে। তিনি শুধু অন্ধের মতো হাতড়াইয়া
কিছু পাইবার চেষ্টা করেন নাই।




(২য় পর্ব)
তখনকার দিনে যারা খুব উদারমনস্ক যেমন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সি. এইচ. টনি, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অনুরাগী ছিলেন। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে ভারতীয়দের
সর্বাঙ্গীণ উন্নতি স্বীকার করলেও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা সম্পর্কে
তিনি সন্দিহান ছিলেন। তাঁর মতে, বিলাতী ডিগ্রীর সাহায্যে বিজ্ঞান পড়ানোর
অধিকার পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক হওয়া যায় না। কিন্তু জগদীশচন্দ্র
দৃঢ়সঙ্কল্প—তিনি শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষক নন, তিনি বৈজ্ঞানিকও হতে চান। এর
জন্য তাঁকে অনেক বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হলো। পঁয়ত্রিশতম জন্মদিনে তিনি
প্রতিজ্ঞা করেছিলেন- 'নূতন জ্ঞানের সন্ধানে এবং প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে তাঁর
জীবন উৎসর্গীকৃত হবে।" তখন দেশের এমন অবস্থা ছিল যে, কেউ বৈজ্ঞানিক
হতে চাইলেও তার সুযোগ পাওয়া যেত না। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে যে পড়ানোর
সুযোগ দিয়েছিল, সেই কাজটা যাতে যথাসম্ভব করা হয় তার জন্য সপ্তাহে ২৬ ঘণ্টা
পড়ানোর ভার তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল; উদ্দেশ্য ছিল যাতে তিনি আর
অন্য কোন ব্যাপারে মন দিতে না পারেন। ঐতাছাড়া তখন ল্যাবরেটরির অবস্থা ছিল
অত্যন্ত সঙ্গিন এবং সেইসঙ্গে যন্ত্র তৈরি করার জন্য কোন যন্ত্র-নির্মাতাও জুটত না।
সরকারের পক্ষ থেকেও গবেষণার জন্য তিনি কোন অর্থসাহায্য পাননি; কারণ,
তাদের বিশ্বাস ছিল ভারতীয়দের দ্বারা বিজ্ঞানের কোন মৌলিক গবেষণা সম্ভব নয়।
কিন্তু জগদীশচন্দ্রও দমে যাওয়ার পাত্র নন, অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে তিনি
বদ্ধপরিকর। সুতরাং নিজের সামান্য সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে তিনি মাত্র কুড়ি স্কোয়ার ফুট
মাপের ল্যাবরেটরিতে ভারতের প্রথম মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু করলেন।
জগদীশচন্দ্রের সর্বপ্রথম গবেষণা হলো 'হার্টজিয়ান ওয়েভ'-এর ওপর। তড়িৎ
চুম্বকীয় তরঙ্গের ওপর তাঁর এই গবেষণা ভারতে পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেন এক
নবযুগের সূচনা করেছিল। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে 'এশিয়াটিক সোসাইটি
অব বেঙ্গল'-এর বিজ্ঞান-পত্রে তিনি তাঁর গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলকে প্রকাশ
করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় বিজ্ঞান-পত্রটি তিনি পাঠিয়েছিলেন লর্ড র‍্যালের কাছে
এবং সেটি ‘ইলেকট্রিসিয়ান' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর তৃতীয় বিজ্ঞান-পত্রটি লর্ড
র‍্যালের সুপারিশে রয়্যাল সোসাইটি গ্রহণ করে প্রকাশ করে।
এই সময় জগদীশচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজে এবং টাউন হলে সাফল্যের
সঙ্গে বেতারে বার্তাপ্রেরণের পরীক্ষা দেখালেন। টাউন হলের সেই সভায়
লেফটেন্যান্ট গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডন
থেকে ডি. এসসি. ডিগ্রী লাভ করেন। লর্ড কেলভিন প্রমুখ বিশিষ্ট বিজ্ঞানিগণ তাঁর
গবেষণার উচ্চ প্রশংসা করেন। তখন সরকারের কিছুটা হুঁশ হলো এবং তারা ডঃ বসুর গবেষণার জন্য বাৎসরিক 2500 টাকা অনুমোদন করেন।
লর্ড র‍্যালে ডঃ বসুকে ইংল্যান্ডে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ
আমলাগণ এ-ব্যাপারে কোনই সাহায্য না করায় শেষে আমলাপ্রধান গভর্নর নিজ
দায়িত্বে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এই বৈজ্ঞানিক
অভিযাত্রায় জগদীশচন্দ্র প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন। লিভারপুলের ব্রিটিশ
অ্যাসোসিয়েশনে বিদ্যুৎ-তরঙ্গের ওপর তাঁর প্রথম ভাষণ এমনই আকর্ষণীয় ও
চমকপ্রদ হয়েছিল যে, বিখ্যাত পদার্থবিদ লর্ড কেলভিন গভীর ভাবাবেগে আপ্লুত
হয়ে ভারতে পূর্ণ-সজ্জিত বিজ্ঞানাগার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে ভারত-সচিবকে
পত্র দিয়েছিলেন। রয়্যাল ইনস্টিটিউশন-এ তাঁর বক্তৃতার পর ‘স্পেকটেটর' পত্রিকা
কিছু সময়ের জন্য তাদের ভারত-বিদ্বেষ ত্যাগ করেছিল। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীসমাজ
সমবেতভাবে বিজ্ঞানাগারের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন।
ভারতমাতার বিজ্ঞান-পুত্র জগদীশচন্দ্র দেশে ফিরলেন বিজয়তিলক নিয়ে
এরপরই আরম্ভ হলো একেবারে বিপরীত গতি ! বিপর্যয়ের একটানা বর্ষণ। কয়েকজন
ইংরেজ আমলা এবং বৈজ্ঞানিকের জঘন্য ঈর্ষা তাঁর চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ করে
তোলে। এ ছিল তাঁর জীবনের এক দীর্ঘ বেদনাদায়ক পর্ব। পরাধীন দেশে জন্মগ্রহণ
করা যে কত বড় অভিশাপ তা তিনি ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। প্রকৃতই এই
সময়টা ছিল জগদীশচন্দ্রের জীবনের বড় সঙ্কটময় কাল।








( ভগিনী নিবেদিতা ও জগদীশচন্দ্র বসু )
(প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা,, সাধারণ সম্পাদক,, শ্রী সারদা মঠ,, দক্ষিণেশ্বর)

ভারত-ভগিনী নিবেদিতা ছিলেন ভারতের একান্ত প্রেমিকা ও সেবিকা
একাধারে। এই সময়কার অপর একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব – বিজ্ঞানজগতে যিনি
ভারতকে শীর্ষস্থানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন, তিনি ভারতের
অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসু। এই দুই বিরাট ব্যক্তিত্বের কর্মক্ষেত্র পৃথক
হলেও তাঁদের কর্মভূমি ভারতবর্ষ এবং সুগভীর ভারতপ্রেমের সাধারণ সূত্র ধরে
এঁদের পরস্পরের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
স্বামী বিবেকানন্দের মানসকন্যা ভগিনী নিবেদিতা স্বামীজীর সান্নিধ্যে এসে
ভারতকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে ভালবেসে ফেলেছিলেন এবং তাঁর গুরুদত্ত
নামটিকে প্রকৃত অর্থে সার্থক করে তুলেছিলেন। তাঁর অবদান শুধু ভারতের
স্বাধীনতা আন্দোলনেই নয়; জাতির সর্বাঙ্গীণ উন্নতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই, যেমন—
সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান
ছিল অপরিসীম।
জগদীশচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল তখনকার দিনের অবিভক্ত বাংলার
ময়মনসিংহে। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র বসু
ছিলেন সেখানকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
মায়ের নাম বামাসুন্দরী দেবী। তাঁর জন্ম
হয়েছিল ৩০ নভেম্বর, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
আদর্শবাদী, দেশপ্রেমিক পিতা তাঁর
সন্তানকে ইংরেজী স্কুলে পড়তে না
দিয়ে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বাংলা বিদ্যালয়ে
পড়িয়েছিলেন। এর ফলে জগদীশচন্দ্র
লাভ করেছিলেন স্বদেশ ও স্বজাতির
ঐতিহ্যকে। বহু পরে তিনি বলেছিলেন:
“আজ বুঝতে পারছি, কি উদ্দেশে বাংলা
স্কুলে বাবা আমাকে ভর্তি করে দেন।
সেখানে শুরুতে মাতৃভাষায় শিক্ষা নিতে
হয়েছে, সেই ভাষায় ভাবতে হয়েছে,
জাতীয় ভাষার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে, আমি নিজেকে
জনগণের একজন বলে ভাবতে শিখেছি, উচ্চম্মন্যতা আমাকে সরিয়ে রাখেনি।


স্বদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ছেলেবেলায় তাঁর মনে গভীর রেখাপাত
করেছিল। এগারো বছর বয়সে জগদীশচন্দ্র মফস্বল থেকে কলকাতা শহরে এসে
প্রথমে হেয়ার স্কুলে, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হন। তারপর বৃত্তি নিয়ে
এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ
করেন। সেখান থেকেই বিজ্ঞান নিয়ে আই.এ. এবং পরে বি.এ. পাশ করেন। এরই
সঙ্গে সংস্কৃত এবং ল্যাটিনও তিনি ভালভাবে শিখেছিলেন। তারপর পিতার আর্থিক
সঙ্কট দূর করার জন্য বিদেশে গিয়ে আই.সি.এস. পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তাঁর
পিতার মহত্ত্ব এখানেই প্রকাশিত হয়েছিল যে, তিনি কিন্তু তাঁর পুত্রকে প্রশাসক হতে
না দিয়ে বিদ্বান হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। তাই বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার জন্য
তিনি জগদীশচন্দ্রকে ইংল্যান্ডে পাঠান। পারিবারিক অর্থসঙ্কট সত্ত্বেও পিতার এই
চরম নির্দেশ পেয়ে তার মনে হয়েছিল : “আমি জানলাম, আমি অপরের শাসক হব
না, আমি শাসন করব শুধু নিজেকে; বিদ্বান হতে হবে আমাকে, প্রশাসক নয়।””
তিনি ইংল্যান্ডে সম্মানের সঙ্গে শিক্ষা সমাপ্ত করে একসঙ্গে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে অত্যুচ্চ ডিগ্রী নিয়ে যখন দেশে ফিরলেন,
তখন ভারতে ভাইসরয় ছিলেন উদারনৈতিক লর্ড রিপন। জগদীশচন্দ্র লন্ডনের
অর্থনীতির অধ্যাপক ফসেটের সুপারিশপত্র নিয়ে এসেছিলেন বলে সঙ্গে সঙ্গে লর্ড
রিপন তাঁকে উপযুক্ত চাকরি দেওয়ার জন্য ডি. পি. আই.-কে লিখে পাঠালেন। কিন্তু
ডি. পি. আই. নেটিভ বলে তাঁকে ইম্পিরিয়াল সার্ভিসে চাকরি দিতে একেবারেই
রাজি ছিলেন না। কিন্তু তাঁর কথামতো জগদীশচন্দ্র প্রভিন্সিয়াল এডুকেশন সার্ভিসে
যোগদান করতে অস্বীকার করেন। এর ফলে তখন থেকে তাঁকে জীবনে প্রতি পদে
লড়াই করে এগতে হয়েছিল। তিনি প্রথম থেকেই দৃঢ়সঙ্কল্প নিয়েছিলেন যে, প্রথমত,
চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে বেতনের দিক দিয়ে যে বৈষম্য তা
দূর করবেনই এবং দ্বিতীয়ত, তিনি দেখাবেন—ভারতীয়রাও বিজ্ঞানশিক্ষা দিতে
পারে—শুধু তাই নয়, বৈজ্ঞানিকও হতে পারে। পরে ডি.পি.আই. বাধ্য হয়ে
তাঁকে অস্থায়িভাবে ইম্পিরিয়াল সার্ভিসে চাকরি দেন। কিন্তু ব্রিটিশদের তুলনায়
তাঁর মাহিনা ছিল এক-তৃতীয়াংশ কম। নেটিভ এবং ব্রিটিশদের মধ্যে বেতনের
এই বৈষম্যের প্রতিবাদকল্পে তিনি প্রায় তিন বছর বেতন গ্রহণ করেননি, যদিও
সে-সময় তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। তবে তিন বছর চাকরির পর
তিনি শেষপর্যন্ত সংগ্রামে জয়ী হয়ে একসঙ্গে তাঁর প্রাপ্য সবটুকু বেতনই পেয়েছিলেন
এবং তাঁর চাকরিও স্থায়ী হয়েছিল।

20 last posts shown.