(৪র্থ পর্ব)
ব্রিটিশ সরকার কখনই তাঁর কাজে কোন উৎসাহ দেয়নি, পরিবর্তে দেখিয়েছে
চরম উদাসীনতা। গবেষণার প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য তিনি পাননি। ‘রয়্যাল
সোসাইটি'তে তাঁর বক্তব্য বিষয় পেশ করার অনুমোদন সহজে পাওয়া যায়নি।
এমনকি তাঁর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পর্যন্ত বিলুপ্তিসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে।
ক্রমান্বয়ে এই সকল বাধার সম্মুখীন হতে হতে অনেক সময় তিনি হতাশ ও অবসন্ন
বোধ করতেন। নিবেদিতা তাঁর এই সকল বিষয় ও অসুবিধা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন।
তিনি জানতেন যে, স্বাধীন দেশের একজন সাধারণ বৈজ্ঞানিকও কত সুযোগ-সুবিধা
পান। তাই এমন বিরল প্রতিভার এহেন দুর্দশা দেখে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তাঁর মন
আক্রোশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তিনি মনে করতেন, ডঃ বসু জাতীয় সম্পদ। তাই শুধু
সাহায্য নয়, সর্বতোভাবে তাঁকে রক্ষা করা তাঁর নিজের দায়িত্ব। স্বামীজী চেয়েছিলেন,
ভারতবাসী পাশ্চাত্য দেশবাসীকে তাঁর অধ্যাত্মজ্ঞানভাণ্ডার থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান
দান করবে এবং তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান তথা অপরাবিদ্যার জ্ঞান লাভ করে
স্বদেশের ঐহিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। নিবেদিতাও বুঝেছিলেন, বিজ্ঞানচর্চা
ছাড়া বর্তমান ভারতের জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।
ডঃ বসু তাঁর বিজ্ঞানসাধনায় জয়লাভ করলে বিজ্ঞানজগতে এক বিরাট পরিবর্তন
আসবে, তার ফলে ভারতবর্ষ বিশ্বের দরবারে গভীর মর্যাদা লাভ করবে। “ভারতের
অদ্বৈত-তত্ত্ব বিজ্ঞানের মধ্য দিয়া পুনরায় প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হইবে।” —এই ছিল
নিবেদিতার স্বপ্ন। এই কারণে তিনি জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান-গবেষণায় সর্বান্তঃকরণে
ও সর্বতোভাবে সাহায্যদান করতে সদা সাগ্রহে সচেষ্ট থাকতেন।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে থাকার সময় থেকে নিবেদিতা জগদীশচন্দ্র
বসুর গবেষণার কাজে সাহায্য করতে আরম্ভ করেন। ১৯০২ থেকে ১৯০৭-এর
মধ্যে ডঃ বসুর তিনটি বিখ্যাত বই প্রকাশিত হয়—Response in the Living and
Non-Living, Plant Response Comparative Electro-Physiology |
তিনি রচনা করেন 'Irritability of Plants' এবং অন্যান্য আরও প্রবন্ধ, যা পরে
ধারাবাহিকভাবে রয়্যাল সোসাইটি-পরিচালিত 'Philosophical Transactions'
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই সবকিছুই নিবেদিতা কর্তৃক সম্পাদিত বললে যথার্থ হয়
না। নিবেদিতার অসাধারণ ভাষানৈপুণ্য ঐ সকল বই প্রকাশ করতে যথেষ্ট সাহায্য
করেছিল। এই কয়েক বছর নিবেদিতা নিজেও কয়েকটি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ
রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। এই সময় ডঃ বসু প্রায় প্রতিদিন
বোসপাড়া লেনে আসতেন এবং বহুক্ষণ ধরে লেখালেখি চলত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
দেবমাতা (মিস লরা গ্লেন) কিছুদিন নিবেদিতার বাড়িতে ছিলেন। নিবেদিতার
বিদ্যালয় সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, ভগিনী নিবেদিতা লেখার কাজে সম্পূর্ণ মগ্ন
থাকতেন। ডঃ বসুর উদ্ভিজ্জীবন সম্বন্ধে নতুন পুস্তক রচনার কাজে তিনি সাহায্য
করতেন এবং তাতেও বহু সময় যেত। ডঃ বসু প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যালয়ে
অতিবাহিত করতেন এবং কখন কখন সেখানে আহারাদি সম্পন্ন করতেন।
ব্রিটিশ সরকার কখনই তাঁর কাজে কোন উৎসাহ দেয়নি, পরিবর্তে দেখিয়েছে
চরম উদাসীনতা। গবেষণার প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য তিনি পাননি। ‘রয়্যাল
সোসাইটি'তে তাঁর বক্তব্য বিষয় পেশ করার অনুমোদন সহজে পাওয়া যায়নি।
এমনকি তাঁর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পর্যন্ত বিলুপ্তিসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে।
ক্রমান্বয়ে এই সকল বাধার সম্মুখীন হতে হতে অনেক সময় তিনি হতাশ ও অবসন্ন
বোধ করতেন। নিবেদিতা তাঁর এই সকল বিষয় ও অসুবিধা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন।
তিনি জানতেন যে, স্বাধীন দেশের একজন সাধারণ বৈজ্ঞানিকও কত সুযোগ-সুবিধা
পান। তাই এমন বিরল প্রতিভার এহেন দুর্দশা দেখে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তাঁর মন
আক্রোশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তিনি মনে করতেন, ডঃ বসু জাতীয় সম্পদ। তাই শুধু
সাহায্য নয়, সর্বতোভাবে তাঁকে রক্ষা করা তাঁর নিজের দায়িত্ব। স্বামীজী চেয়েছিলেন,
ভারতবাসী পাশ্চাত্য দেশবাসীকে তাঁর অধ্যাত্মজ্ঞানভাণ্ডার থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান
দান করবে এবং তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান তথা অপরাবিদ্যার জ্ঞান লাভ করে
স্বদেশের ঐহিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। নিবেদিতাও বুঝেছিলেন, বিজ্ঞানচর্চা
ছাড়া বর্তমান ভারতের জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।
ডঃ বসু তাঁর বিজ্ঞানসাধনায় জয়লাভ করলে বিজ্ঞানজগতে এক বিরাট পরিবর্তন
আসবে, তার ফলে ভারতবর্ষ বিশ্বের দরবারে গভীর মর্যাদা লাভ করবে। “ভারতের
অদ্বৈত-তত্ত্ব বিজ্ঞানের মধ্য দিয়া পুনরায় প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হইবে।” —এই ছিল
নিবেদিতার স্বপ্ন। এই কারণে তিনি জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান-গবেষণায় সর্বান্তঃকরণে
ও সর্বতোভাবে সাহায্যদান করতে সদা সাগ্রহে সচেষ্ট থাকতেন।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে থাকার সময় থেকে নিবেদিতা জগদীশচন্দ্র
বসুর গবেষণার কাজে সাহায্য করতে আরম্ভ করেন। ১৯০২ থেকে ১৯০৭-এর
মধ্যে ডঃ বসুর তিনটি বিখ্যাত বই প্রকাশিত হয়—Response in the Living and
Non-Living, Plant Response Comparative Electro-Physiology |
তিনি রচনা করেন 'Irritability of Plants' এবং অন্যান্য আরও প্রবন্ধ, যা পরে
ধারাবাহিকভাবে রয়্যাল সোসাইটি-পরিচালিত 'Philosophical Transactions'
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই সবকিছুই নিবেদিতা কর্তৃক সম্পাদিত বললে যথার্থ হয়
না। নিবেদিতার অসাধারণ ভাষানৈপুণ্য ঐ সকল বই প্রকাশ করতে যথেষ্ট সাহায্য
করেছিল। এই কয়েক বছর নিবেদিতা নিজেও কয়েকটি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ
রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। এই সময় ডঃ বসু প্রায় প্রতিদিন
বোসপাড়া লেনে আসতেন এবং বহুক্ষণ ধরে লেখালেখি চলত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
দেবমাতা (মিস লরা গ্লেন) কিছুদিন নিবেদিতার বাড়িতে ছিলেন। নিবেদিতার
বিদ্যালয় সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, ভগিনী নিবেদিতা লেখার কাজে সম্পূর্ণ মগ্ন
থাকতেন। ডঃ বসুর উদ্ভিজ্জীবন সম্বন্ধে নতুন পুস্তক রচনার কাজে তিনি সাহায্য
করতেন এবং তাতেও বহু সময় যেত। ডঃ বসু প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যালয়ে
অতিবাহিত করতেন এবং কখন কখন সেখানে আহারাদি সম্পন্ন করতেন।