৬ষ্ঠ পর্ব
নিবেদিতা সম্বন্ধে ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর কোন পত্র বা পত্রিকায় বিশেষ লিখিত
বিবরণ পাওয়া যায় না। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: “তাঁহার বিষয়ে আচার্য
বসু মহাশয়ের নিকট অনেক কথা শুনিয়াছি, তাহা অধিকতর শিক্ষাপ্রদ ও মনোহর।
নিবেদিতার প্রতি তাঁহার অন্তরের শ্রদ্ধা ঐ সকল প্রসঙ্গকালেই ব্যক্ত হইত।” ঐরূপ
এক কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “নিবেদিতার মহাপ্রাণতা ও ত্যাগের কথা
আমরা ধারণা করতে পারব না। দেশ উপযুক্ত হলে তাঁর কদর বুঝবে।”
নিবেদিতার অন্তরের একান্ত আকঙ্ক্ষা ছিল ভারতের অর্থে ভারতীয়দের
দ্বারা একটি বিজ্ঞান-মন্দির
বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান-মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে
প্রতিষ্ঠিত হবে,
যেখানে ভারতীয় ছাত্ররা বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান - মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ডঃ বসুর সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনার অন্ত ছিল না। পরবর্তিকালে জগদীশচন্দ্র বসু
কর্তৃক যে বিজ্ঞান-মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার দ্বারদেশে দেওয়ালের গায়ে
খোদিত দীপহস্তে নারীমূর্তিটি নিবেদিতার পুণ্যস্মৃতির নিদর্শন। অধ্যাপক গেডিজ
লিখেছেন: “বিজ্ঞান ও ভারতের অগ্রগতির বিপুল সম্ভাবনায় পূর্ণ, বহু-আকাঙ্ক্ষিত
এই গবেষণাগারের বাস্তবরূপ গ্রহণে নিবেদিতার জ্বলন্ত বিশ্বাস কম প্রেরণা ও
উৎসাহ দেয় নাই। তাঁহার [বসুর] গবেষণাগারের প্রবেশপথে স্মৃতি উৎসের
সম্মুখস্থিত মন্দিরাভিমুখে দীপহস্তে নারীমূর্তিটির এইভাবে ব্যাখ্যা করা যাইতে
পারে।”
নিবেদিতার প্রতিভা ছিল সর্বতোমুখী। তাই বৈজ্ঞানিক, স্বদেশসেবক,
সাহিত্যিক, সাংবাদিক—প্রত্যেকে তাঁর মধ্যে নিজের জীবনের আদর্শের পূর্ণ
অভিব্যক্তি দেখে মুগ্ধ হতেন এবং সর্বদা তাঁর নিকট নিজ জীবনের উদ্দেশ্যসাধনে
সাহায্য, উৎসাহ ও প্রেরণা লাভ করে কৃতজ্ঞ বোধ করতেন। ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামে, সভ্যতা ও সংস্কৃতি গঠনের মূলে সমাজের উচ্চস্তরে যে-সকল শিক্ষিত
এবং প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের ওপর নিবেদিতার প্রভাব ছিল সুগভীর।
যে তাঁর সান্নিধ্যে এসেছে সে-ই ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর অকপট শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ না হয়ে পারেনি। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে
মেলামেশা ও আদান-প্রদান যেমন তাঁর চরিত্রের ও কর্মজীবনের বহু দিক
উন্মোচিত করেছে, তেমনি এরূপে নানাভাবে ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর আন্তরিক
অনুরাগ ও সুগভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ নিবেদিতাকে আশীর্বাদ
করে বলেছিলেন: “ভবিষ্যৎ ভারতের সন্তানের তরে/ সেবিকা, বান্ধবী, মাতা,
তুমি একাধারে।” গুরুর এই বাক্য নিবেদিতা তাঁর জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে
বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন। বর্তমান ভারতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনে তাঁর যে সুমহান অবদান, তা তাঁর এরূপ আদর্শ জীবনেরই একটি অন্যতম অভিব্যক্তি।
(সমাপ্ত)
নিবেদিতা সম্বন্ধে ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর কোন পত্র বা পত্রিকায় বিশেষ লিখিত
বিবরণ পাওয়া যায় না। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: “তাঁহার বিষয়ে আচার্য
বসু মহাশয়ের নিকট অনেক কথা শুনিয়াছি, তাহা অধিকতর শিক্ষাপ্রদ ও মনোহর।
নিবেদিতার প্রতি তাঁহার অন্তরের শ্রদ্ধা ঐ সকল প্রসঙ্গকালেই ব্যক্ত হইত।” ঐরূপ
এক কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “নিবেদিতার মহাপ্রাণতা ও ত্যাগের কথা
আমরা ধারণা করতে পারব না। দেশ উপযুক্ত হলে তাঁর কদর বুঝবে।”
নিবেদিতার অন্তরের একান্ত আকঙ্ক্ষা ছিল ভারতের অর্থে ভারতীয়দের
দ্বারা একটি বিজ্ঞান-মন্দির
বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান-মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে
প্রতিষ্ঠিত হবে,
যেখানে ভারতীয় ছাত্ররা বিজ্ঞানসাধনার অবাধ সুযোগ পাবে। ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান - মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ডঃ বসুর সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনার অন্ত ছিল না। পরবর্তিকালে জগদীশচন্দ্র বসু
কর্তৃক যে বিজ্ঞান-মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার দ্বারদেশে দেওয়ালের গায়ে
খোদিত দীপহস্তে নারীমূর্তিটি নিবেদিতার পুণ্যস্মৃতির নিদর্শন। অধ্যাপক গেডিজ
লিখেছেন: “বিজ্ঞান ও ভারতের অগ্রগতির বিপুল সম্ভাবনায় পূর্ণ, বহু-আকাঙ্ক্ষিত
এই গবেষণাগারের বাস্তবরূপ গ্রহণে নিবেদিতার জ্বলন্ত বিশ্বাস কম প্রেরণা ও
উৎসাহ দেয় নাই। তাঁহার [বসুর] গবেষণাগারের প্রবেশপথে স্মৃতি উৎসের
সম্মুখস্থিত মন্দিরাভিমুখে দীপহস্তে নারীমূর্তিটির এইভাবে ব্যাখ্যা করা যাইতে
পারে।”
নিবেদিতার প্রতিভা ছিল সর্বতোমুখী। তাই বৈজ্ঞানিক, স্বদেশসেবক,
সাহিত্যিক, সাংবাদিক—প্রত্যেকে তাঁর মধ্যে নিজের জীবনের আদর্শের পূর্ণ
অভিব্যক্তি দেখে মুগ্ধ হতেন এবং সর্বদা তাঁর নিকট নিজ জীবনের উদ্দেশ্যসাধনে
সাহায্য, উৎসাহ ও প্রেরণা লাভ করে কৃতজ্ঞ বোধ করতেন। ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামে, সভ্যতা ও সংস্কৃতি গঠনের মূলে সমাজের উচ্চস্তরে যে-সকল শিক্ষিত
এবং প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের ওপর নিবেদিতার প্রভাব ছিল সুগভীর।
যে তাঁর সান্নিধ্যে এসেছে সে-ই ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর অকপট শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ না হয়ে পারেনি। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে
মেলামেশা ও আদান-প্রদান যেমন তাঁর চরিত্রের ও কর্মজীবনের বহু দিক
উন্মোচিত করেছে, তেমনি এরূপে নানাভাবে ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর আন্তরিক
অনুরাগ ও সুগভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ নিবেদিতাকে আশীর্বাদ
করে বলেছিলেন: “ভবিষ্যৎ ভারতের সন্তানের তরে/ সেবিকা, বান্ধবী, মাতা,
তুমি একাধারে।” গুরুর এই বাক্য নিবেদিতা তাঁর জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে
বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন। বর্তমান ভারতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ডঃ জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনে তাঁর যে সুমহান অবদান, তা তাঁর এরূপ আদর্শ জীবনেরই একটি অন্যতম অভিব্যক্তি।
(সমাপ্ত)