আল্লাহর পথে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। প্রকৃত পক্ষে তারাই জীবিত তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের চেতনা নেই। (সুরা আল বাকারা- ১৫৪)
সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। সৃষ্টির সূচনা থেকে চলে আসছে আলো আঁধারের তীব্র সংঘাত। এই সংঘাতে বারবারই পূর্ণতা পেয়েছে আলো। তারা ত্যাগ ও কুরবানীর মধ্যে সফল হয়েছে। এই কুরবানী ও অমরত্ব নি:সন্দেহে কোন সাধারণ মানুষের ভাগ্যে জোটে না। তারা হন এমন মানুষেরা, যারা প্রিয় তার পরিবার পরিজনদের কাছে। প্রিয় তার পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে। প্রিয় তার চারপাশের সকলের কাছে। আর সর্বোপরি প্রিয় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। আর এই অমরত্বের সিঁড়ি হল শাহাদাত, যা মুমিন জীবনের একান্ত কামনা।
সেই ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় তৎকালিন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বর্তমান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিথ্যার কবল থেকে মুক্ত করতে ১৯৮২-৮৩ সেশনে পূরকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়ে শাহাদাতের নাজরানা পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালিন সভাপতি শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ হলের (বর্তমান শহীদ মুহাম্মদ শাহ্ হল) ২২২নং কক্ষটি তার জন্য বরাদ্দ ছিল। প্রকৌশল অঙ্গনের মেধাবী মুখগুলোর কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শের বাণী পৌঁছে দিতে মাহফুজ ভাই ছিলেন সদা তৎপর। অসাধারণ মিশুক আর অমায়িক আচরণের কারণে ক্যাম্পাসের ছোট বড় সকলের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। ছোটদের দেখলে তিনি মিষ্টি হেসে সালাম দিতেন। এই অমায়িকতাই কে না মুগ্ধ হবে? এই অমায়িক মানুষটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল শাখার সভাপতি থাকা অবস্থাতেই বামপন্থী বাতিল হায়েনাদের আঘাতে তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন; চলে যান আল্ল¬াহ রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যে। ইসলামী আন্দোলনের কাজে আহ্বান করতে গিয়ে মাহফুজুল হক চৌধুরী সেইদিন কলেজের পাশে রওজার হাট অবস্থান করেছিলেন। দিনটি ছিল ২৭ জানুয়ারি ১৯৮৬ সাল। বাতিল হায়েনাদের মাথায় যেন খুন চেপে বসেছিল সেদিন। যে মুখ দিয়ে আল্লাহর প্রশংসার বাণী ঝরে পড়ত। যে মাথায় অংকিত হয়েছিল সিজদার চিহ্ন। ঐ হায়েনার দল আঘাত করল সে মাথায়। প্রিয় মাহফুজ ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। রক্তে রঞ্জিত হল তার পবিত্র দেহ।
অনেকক্ষণ এ অবস্থায় পড়ে থাকার পর যখন লোকজন দেখতে পেল। তারা উদ্যোগী হল মাহফুজ ভাইকে হাসপাতালে নেবার জন্য। হাসপাতালে নেয়ার পথে হঠাৎ তার জ্ঞান ফিরে আসে। আকুতি জানাতে থাকেন তাকে আহত স্থানে নেয়ার জন্য অবশেষে ২৮ জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে সকাল ৬.১০ মি. আল্লাহর এই প্রিয় বন্ধু তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। আর অমর হয়ে বেঁচে রইলেন সবার হৃদয়ের মাঝে যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে।
ব্যক্তিগত পরিচিতি:
চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণে অবস্থিত সাতকানিয়া থানার ছদাহা ইউনিয়নের খোর্দ্দ কেওচিয়া গ্রামের নুনু চৌধুরীর বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ০২ এপ্রিল ১৯৫৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী। তার মায়ের নাম মোছাম্মত মনিরা বেগম এবং পিতার নাম মাওলানা আব্দুর রহিম চৌধুরী। শহীদের পিতা স্থানীয় মসজিদের ইমাম। স্বনামধন্য জাতি গড়ার কারিগর এবং টানা চৌদ্দ বছর ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে